এ নির্বাচন জাতির সঙ্গে ‘নিষ্ঠুর প্রহসন’

এদিকে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কয়েক দফা ব্রিফিংয়ে দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন, র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবির সহায়তায় আওয়ামী লীগের লোকজন সারা দেশে সহিংসতা ও দখলের নির্বাচন চালিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে শনিবার রাতেই ভোট জালিয়াতি করা হয়েছে। আর দিনের বেলা নির্বাচনের নামে তামাশা করা হচ্ছে। এ নির্বাচন সাজানো। তিনি দাবি করেন, শনিবার রাত থেকে নির্বাচন পরিস্থিতি দেখে পরিষ্কার বলা যায়, সরকার একতরফা নির্বাচন করছে। এটা একটা সহিংস নির্বাচন। মানুষ যাচ্ছে কিন্তু ভোট দিতে পারছে না।

রিজভী বলেন, সরকার যে একতরফা নির্বাচনের পরিকল্পনা আগে থেকেই করেছিল, নির্বাচন শুরুর দুই ঘণ্টার নির্বাচনেই তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। নির্বাচনকে ঘিরে কেন্দ্র দখল ও এজেন্টদের বের করে দেয়া ও তাদের ওপর হামলাসহ নানা অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। এটি সহিংস নির্বাচনেরই চিত্র। র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবির সহায়তায় আওয়ামী লীগের লোকজন এ তাণ্ডব চালাচ্ছে। সকাল থেকে তিন দফা সারা দেশের নির্বাচনী চিত্র তুলে ধরেন রিজভী।

রিজভী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পদদলিত করে ক্ষমতার মসনদে থাকবেন শেখ হাসিনা। চেতনার সন্ত্রাস করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ভূলুণ্ঠিত করে রক্তাক্ত নির্বাচন করছে। এ ভয়ংকর পরিস্থিতির অবসান করবে জনগণ।

ভোট গ্রহণ শুরুর কয়েক ঘণ্টা পর প্রেস ব্রিফিংয়ে রিজভী বলেন, সকালে ভোট গ্রহণ শুরু হলেও কোনো কেন্দ্রে আমাদের এজেন্টদের ঢুকতে দেয়নি আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। আমার হাতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সকাল ১১টা পর্যন্ত ২০ শতাংশের মতো, মোট যে ভোট কেন্দ্র আছে তার ২০ ভাগ ভোট অলরেডি কেটে ফেলা হয়েছে, নিয়ে গেছে।

রাতেই ব্যালটে সিল মারা হয়েছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, সারা দেশের প্রায় অর্ধশতাধিক আসনে রাতেই ব্যালটে সিল মারা হয়েছে। কেন্দ্রে বিএনপির এজেন্টদের ঢুকতে দেয়া হয়নি। টাঙ্গাইল-২ আসনের শ্যামপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি আবদুল আজিজকে গতকাল রাতে আওয়ামী লীগের লোকজন কুপিয়ে হত্যা করেছে। আজ গুলি করা হয়েছে ঢাকা-৪ আসনের বিএনপির প্রার্থী সালাহউদ্দিনকে। তিনি ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানের আসনে ৯৫ ভাগ কেন্দ্র দখল করা হয়েছে। নোয়াখালী-৩ এর ১২৯টি কেন্দ্রের ১২৭টি কেন্দ্রই দখল করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় প্রার্থীদের ভোট দিতে দেয়া হয়নি। প্রার্থীর এজেন্টদের গ্রেফতার করা হয়েছে।’

ভোট শুরুর দুই ঘণ্টা পর রিজভী দাবি করেন, সারা দেশে ২০ শতাংশ ভোট কেন্দ্র দখল হয়ে গেছে। মোট ভোটের ৩০ থেকে ৪০ ভাগ রাতেই সরকারপন্থীরা সিল মেরে দিয়েছে। র‌্যাব-বিজিবি-পুলিশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে।

রিজভী জানান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও নোয়াখালী-৫ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ নিজেই ভোট দিতে পারেননি বলে তাকে ফোন করে জানিয়েছেন। মওদুদের অভিযোগ, তার আসনের বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রের আশপাশে বোমা ফাটানো হচ্ছে। তাই প্রকৃত ভোটাররা ভয়ে ভোট দিতে যেতে সাহস করছেন না।

ভোলা-৩ আসনের বিএনপি প্রার্থী মেজর (অব.) হাফিজকেও প্রশাসন থেকে গ্রেফতারের হুমকি দিয়ে বাসায় অবস্থান করতে বলা হচ্ছে। শেখ হাসিনার অধীনে যে একটি উৎসবমুখর নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে যাবে, তা আশা করা যায় না। আমি বলতে চাই শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে ভোট বলুন, নির্বাচন বলুন সেটা আনন্দদায়ক হবে না। আমরা যখন স্থানীয় সরকার নির্বাচন দেখেছি যেভাবে ফ্যাসিবাদের আত্মপ্রকাশ ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে, সেখানে যতটুকু গণতন্ত্রের স্পেস পাচ্ছি সেটা আমরা ব্যবহার করছি। কারণ ফ্যাসিবাদ মানেই তো হচ্ছে রক্তঝরা একটি মতবাদ বা ইমেজ। ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, ফরিদপুর, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন আসনে আওয়ামী লীগের ভোট সন্ত্রাস, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তাণ্ডব, এজেন্টদের ঢুকতে না দেয়া কিংবা বের করে দেয়ার তথ্য তুলে ধরেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।