৭ই নভেম্বর সিপাহি জনতার বিপ্লবে শহীদ জিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশের পুনর্জন্ম

(রাজ মাসুদ ফরহাদ, লন্ডন মহানগর বিএনপি ডেস্ক)  

৭ই নভেম্বর সিপাহি জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লব বাংলাদেশকে দ্বিতীয়বার পরাধীন হতে মুক্ত করেছিল। সেদিন সিপাহি জনতা পথে না নামলে, শহীদ জিয়া নেতৃত্ব না দিলে ভারত বাংলাদেশ দখল করতো এদেশীয় দোসর খালেদ মোশারফ নামক মীরজাফরদের দিয়ে। বাংলাদেশ পরিণত হতো ভারতের একটি অঙ্গরাজ্যে — হতো আরেকটি কাশ্মীর কিংবা সিকিম! 

৭ই নভেম্বর শহীদ জিয়া বাংলাদেশকে দিয়েছিলেন পুনর্জন্ম।

আজ ৭ নভেম্বর, ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে সংঘটিত হয়েছিল সিপাহি-জনতার বিপ্লব। বাংলাদেশের রাজনীতিতে দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সিপাহি-জনতার এই বিপ্লব দেশের তৎকালীন রাজনীতির গতিধারা পাল্টে দিয়ে দেশ ও জাতিকে নতুন পরিচয়ে অভিষিক্ত করেছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট-পরবর্তী সেনা অভ্যুত্থান, পাল্টা অভ্যুত্থানে দেশে যখন চরম নৈরাজ্যজনক পরিস্থিতি বিরাজ করছিল, তখন সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থান দেশ ও জাতিকে অনাকাঙ্ক্ষিত সেই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিয়েছিল। অভূতপূর্ব সেই বিপ্লব-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সাময়িক বন্দিদশা থেকে মুক্ত হন তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন দিবসটি উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করছে। 

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর। অস্থির এক সময় পার করছিল বাংলাদেশ। ভারতের কূটচালে লাখো শহীদের আত্নত্যাগে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত হওয়ার পথে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় সেনানিবাসের ভেতরে তখন ভয়াবহ পরিস্থিতির তৈরি হয়েছিল। গুলির তীব্রতা এতোই বেশি ছিল যে কেউ কারো কথা শুনতে পাচ্ছিল না।

‘আমি তখন সিদ্ধান্ত নিলাম এ তীব্র গোলাগুলির মধ্যেই আমাকে আমার ব্যাটালিয়নে পৌঁছতে হবে। চতুর্দিক থেকে গোলাগুলি হচ্ছিল। আমরা বুঝতে পারছিলাম না কোনদিন থেকে গুলি আসছে,’ বলছিলেন মি: ইব্রাহিম।

এর আগে ৩রা নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশারফের নেতৃত্বে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তখনকার সেনা প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে বন্দী খালেদ মোশারফ সেনা প্রধান হন।

আদালতে দেওয়া কর্নেল আবু তাহেরের জবানবন্দিতে ছিল: ‘ওই দিন (৩ নভেম্বর) বহু সেনাসদস্য, এনসিও এবং বেসিও আমার নারায়ণগঞ্জের বাড়িতে এলেন। তাঁরা আমাকে জানালেন, ভারত খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থানে মদদ জুগিয়েছে এবং বাকশালের সমর্থকেরা আবার ক্ষমতা দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে।’এরপর তিনি বলছেন, ‘৩ নভেম্বরের পর জাতি কী ভয়ংকর ও নৈরাজ্য পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল, তা কারওই অজানা নয়। আমাদের জাতীয় সম্মান ও সার্বভৌমত্ব কীভাবে ভূলুণ্ঠিত হচ্ছিল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ সময় জনগণের কাছে এটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে ভারত খালেদ মোশাররফকে মদদ দিচ্ছিল।’

মূলত তার পর থেকেই পাল্টা আরেকটি অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা জোরদার হতে থাকে।

সেসব সৈন্য জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করতে যাচ্ছিল তাদের কাছে কর্নেল তাহেরের নির্দেশনা ছিল যে জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করে যেন ঢাকার এলিফেন্ট রোডে কর্নেল তাহেরের বাসায় নিয়ে আসা হয়।

কিন্তু জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করার পর তাকে সাথে না নিয়ে সৈন্যরা গুলি ছুঁড়তে-ছুঁড়তে এলিফেন্ট রোডে ফিরে আসে।

৭ই নভেম্বরের কয়েকদিন পরে জিয়াউর রহমান সিদ্ধান্ত নিলেন যে তিনি ঢাকা সেনানিবাসে সৈনিকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন।

অনুষ্ঠানস্থলে তিনি উপস্থিত হবার সাথে সাথে একদল সৈনিক ‘জিয়া ভাই-জিয়া ভাই’ বলে শ্লোগান দিতে থাকে।
তখন জিয়াউর রহমান তাদের ধমক দিয়ে বলেন তাকে ‘ভাই’ হিসেবে সম্বোধন করা যাবেনা । সেনাবাহিনীর নিয়ম অনুযায়ী তাকে ‘স্যার’ হিসেবে সম্বোধন করতে হবে।

জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, সে পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীতে কমান্ড প্রতিষ্ঠার জন্য জিয়াউর রহমানের এ ধরনের অবস্থান নেয়া বেশ কঠিন এবং বিপদজনক ছিল। কারণ সৈনিকরা তখন বিশৃঙ্খল।

কেউ কারো নির্দেশনা মানছে না। কে ঊর্ধ্বতন আর কে অধস্তন সে বিষয়টি কেউ আমলে নিচ্ছে না। এমন পরিস্থিতি জিয়াউর রহমানের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল সামরিক বাহিনীতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা।

মাহবুবুর রহমানের বর্ণনায়, ‘জিয়াউর রহমান উল্কার মতো বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে ছুটে চলেছেন। সেখানে সৈনিকরা কেউ অস্ত্র জমা দেয়না । কেউ ক্যান্টনম্যান্টে আসে না। কেউ কাউকে মানে না। কিন্তু একেকটা জায়গায় গিয়ে তিনি কমান্ড প্রতিষ্ঠা করেছেন।’

জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন তখনকার সেনাবাহিনীতে অফিসাররা চেয়েছিলেন কর্নেল তাহেরর বিচার হোক।

সামরিক অফিসারদের এ দাবী জিয়াউর রহমানের পক্ষে উপেক্ষা করা সম্ভব ছিল না বলে মনে করেন তিনি।

কর্নেল তাহেরকে বিচারের আওতায় না আনলে সেনাবাহিনীর অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে যাবে বলে অনেক কর্মকর্তা মনে করতেন।

তাছাড়া কর্নেল তাহেরের দিক থেকে আরেকটি অভ্যুত্থানের আশংকাও করছিলেন কেউ কেউ।

শহীদ জিয়া বাংলাদেশের ইতিহাসের এক বিজয়ী মহানায়ক। তাঁকে অস্বীকার করা মানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অস্বীকার করা।

( তথ্য সূত্রঃ বিবিসির বিশ্লেষণে ৭ নভেম্বরের ঘটনাপ্রবাহ https://www.bbc.com/bengali/news-46111665)

Print Friendly, PDF & Email